২০১৫সালের ৫ই নভেম্বর বেলজিয়াম ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় দিন। প্রথমবারের মত তারা বিশ্ব ফুটবল র্যাংকিংয়ে প্রথমস্থান অর্জন করে। বর্তমানে ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা বেলজিয়ামকে কয়েক বছর আগেই সাদামাটা দল হিসেবে তকমা দিত সবাই। ১৯৮৬-২০০২ পর্যন্ত টানা ছয়টি বিশ্বকাপ খেলা বেলজিয়াম ২০০২ বিশ্বকাপের পর ফুটবলে খেঁই হারাতে শুরু করে, যার ফলে ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। আর তাতেই টনক নড়ে ফুটবল কর্মকর্তাদের। ঢালাও ভাবে নতুন করে সাজাতে থাকে ঘরোয়া ফুটবল। মেধাবী তরুনদেরকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে থাকে। যার ফলে হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইন, লুকাকুর মত উঠে আসা তরুন খেলোয়াড়দের নিয়া ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আনবিটেন থেকে ব্রাজিলে যাওয়ার টিকিট নিশ্চিত করে বেলজিয়াম। এখনো পর্যন্ত বেলজিয়াম ১২টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৩০ সালে প্রথম বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রতিটি ম্যাচ হেরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয়।
১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালেও প্রথম রাউন্ড (নকআউট পর্ব) থেকে বিদায় নেয়।

১৯৫৪ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে ৪-৪ গোলে ড্র করার পর বেলজিয়াম কে ফেভারিট হিসেবে ধরা হয়েছিল কিন্তু গ্রুপ পর্বের বাকি ম্যাচ গুলো হেরে আবারো সেখান থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের।
গত চার বিশ্বকাপে একটি ম্যাচেও জয় না পাওয়া ১৯৭০ বিশ্বকাপে এল সালভাদোর এর বিপক্ষে প্রথম জয়ের সন্ধান পায় বেলজিয়াম কিন্তু বাকি দু ম্যাচ হেরে একটি জয় হাতে নিয়ে বিদায় নেয় তারা।
১৯৮২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে১-০ গোলে হারিয়ে চমক দেখায় বেলজিয়া। গ্রুপের বাকি দুম্যাচ জিতে আনবিটেন গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে যায় তারা। কিন্তু তাদের এই সাফল্যের ধারা পরের রাউন্ডে অব্যাহত রাখতে পারে নি।

১৯৮৬ সালে কোনমতে দ্বিতীয় রাউন্ড পার করা বেলজিয়াম পরবর্তীতে দ্বিতীয় রাউন্ড ও কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ভাগ্য সহায় না হওয়ায় সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় তাদের। এটাই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের সেরা সাফল্য।
১৯৯০ ও ৯৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডের বেশি এগোতে পারনি। ৯৮ তে গ্রুপের সব ম্যাচ ড্র করে সেখান থেকেই ছিটকে পড়ে।২০০২ বিশ্বকাপেও দৌড় সেই দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত। এরপর ১২ বছর পর ২০১৪ তে ব্রাজিল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পৌছে আর্জেন্টিনার কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়।
এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ জি থেকে লড়বে বেলজিয়াম। গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, পানামা ও তিউনিসিয়া। অঘটন যদি না ঘটে তাহলে খুব সহজেই কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারবে বেলজিয়াম।
তাই শিরোপা জেতার স্বপ্ন নিয়েই এবার রাশিয়া যাবে রেড ডেভিলরা। তাদের দলটাও গড়া হয়েছে সেইরকম ভাবে। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে পরিপূর্ণ একটি দল। দলকে নেতৃত্ব দিবেন দলের ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড ইডেন হ্যাজার্ড। উইংয়ে তার সঙ্গ দিবেন বেলজিয়ামের সর্বোচ্চ গোলদাতা রোমেলু লুকাকু ও নাপোলির খেলোয়াড় মেরটেন্স। ব্যাকআপ হিসেবে আছে বেন্তেকে বাতশুয়াইয়ের মত তরুনরা।

মিডফিল্ডে আছেন বর্তমান বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডারদদের একজন কেভিন ডি ব্রুইন। বেলজিয়াম কে বধ করতে চাইলে এই মিডফিল্ডারকে আটকানো ছাড়া কোন বিকল্প নেই। সাথে উইটসেল,ব্যারাসেকা,ডেম্বেলেরাও আছেন নিজেদের সেরা ফর্মে।
ডিফেন্সে বেলজিয়াম পুরো অভিজ্ঞতায় ভরপুর।সেন্টার ব্যাক হিসেবে থাকবে টটেনহ্যাম ডুয়ো ভার্টনগ্যান ও উইরেল্ড সাথে কম্পানি দিবে কম্পানি। লেফটে ভার্মালিন ও রাইটে থমাস মুনিয়ের। ব্যাকআপে থাকছে লুকাকু, বয়াত ও সিমান। গোলবারের নিচে দায়িত্বটা সাম্লাবেন চেলসির গোলকিপার কর্তোইস। চেলসির হয়ে ১২৬ ম্যাচে ৪৮ টি ক্লিন শিট আছে তার।ব্যাকআপ গোলকি হিসেবে আছে সিমন ও কেস্টিলস।
কোচ রবার্তো মার্তিনেজ এর আন্ডারে বাছাইপর্বে ৩-৪-২-১ এই ফর্মেশনেই বেশি খেলে আসছে বেলজিয়াম। তাই ধারণা করা হচ্ছে বিশ্বকাপেও এই ফর্মেশন দিয়েই খেলাবেন তিনি।
কাগজে কলমে রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল বেলজিয়াম। তাই অনেকের মতে এবারের বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স হিসেবে খেলবে তারা।
১৮জুন পানামার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বেলজিয়াম।
___________________________________________
ফুটবল ফ্রিকে স্পোর্টস ক্যাসেল আয়োজিত বিশ্বকাপ ফিচার লেখা প্রতিযোগীতায় বেলজিয়াম নিয়ে লেখা নির্বাচিত সেরা লেখাটি
লিখেছেন