সক্রেটিস নাম শুনলে বেশির ভাগ মানুষ গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস এর কথা মনে করবে। ফুটবল বিশ্বেও একটা বিখ্যাত সক্রেটিস এসেছিল। তিনি ছিলেন বিশ্বকাপ না জেতা সবচাইতে সেরা দলের দলপতি।
১৯৮২ সালের ব্রাজিল টিমকে বিশ্বকাপ না জেতা অন্যতম সেরা দল মনে করা হয়। যে দল সত্যিকারের সাম্বার ছন্দ তুলতো মাঠের ভেতর। পেশায় ডাক্তার হলেও শুধু বিশ্বকাপে খেলবে বলে ফুটবলে আসা সক্রেটিসের।
শুরুর দিনগুলো ভালো ছিল না। মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান, কম ট্রেনিং করা এসব যেন তার নিয়মিত বিষয় ছিল। তার ধূমপান এতই বেশি ছিল যে কোচ টেলে স্বান্তনা নিজে এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, সক্রেটিস যদি ধূমপান ছেড়ে নিজের দিকে আরো নজর দিত তাহলে সে জিকোর থেকেও সেরা খেলোয়াড় হতো। তবে কি সক্রেটিস এভাবেই চলতে থাকে………?
চলুন দেখা যাক,
স্পেন বিশ্বকাপ ১৯৮২ বিশ্বকাপের ট্রেনিং এ যাওয়ার আগে ক্লাব করিন্থিয়াসে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেণ
সক্রেটিস। একে একে সব প্লেয়ার ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগ দিলেন।স বার নজর গেলো সক্রেটিসের দিকে। নিজের বদ অভ্যাস বদলিয়ে ধূমপান মুক্ত একটা মানুষ। অনিয়ন্ত্রিত জীবনের জন্য নিজের ওজনও বাড়িয়ে ফেলেছিলেন। নিজেকে আবার আগের শেপে নিয়ে আসছেন। যে অভ্যাস তার বাবা তরুণ বয়স থেকে ঠিক করতে পারেনি, কি এমন যাদু করলো যে সে নিজেকে বদলিয়ে নিলো। হিসাবটা খুব সোজা ‘হলুদ জার্সি’। হ্যা পেলে থেকে শুরু করে হালের নেইমার সবাই যে ওই হলুদেই বাধা পড়েছে। সেই হলুদের টানে নিজের সব খারাপ বিদায় দিয়ে, মানব সেবা ডাক্তার পেশা থেকে সরিয়ে নিয়ে নিজেকে ওই বিশ্বকাপের মঞ্চে তুলে ধরেছেন। বিশ্বকাপের আগে নিজের প্রিয়তমাকে কথা দিয়েছিলেন যদি সে গোল করতে পারে তাহলে তার প্রস্তাব যেন
গ্রহণ করে। তিনি খেললেন, গোল করলেন স্পেনের বিপক্ষে। তারপরেই তার ডাক্তারি পাশ করার খবরও পেলেন। প্রিয়তমাকে নিজের করে নিলেন। ওই গোল করার খুশি তিনি পরে আমৃত্যু অর্গাজমের সুখের সাথে তুলনা করেছিলেন।
এসব গেল বাইরের কথা। ফুটবলার হিসেবে তিনি ছিলেন কেমন। প্রথমে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে নিজেকে নামিয়ে আনেন আর একটু নিচে। এটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের আলাদা একটা অবস্থান তৈরি করেন। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত সক্রেটিস ছিলেন থ্রো পাস,মাপা লং বল, লিংক আপ প্লে, ভিসনে ভরপুর একটা কমপ্লিট প্যাকেজ। একটা সেরা টিমের দল নেতা হতে গেলে যে গুণগুলো থাকা লাগে সব কয়টা তার ভেতর দেখেছিলেন কোচ। ইতালির সাথে যে ম্যাচ হেরে বিদায় নিয়েছিলেন সেই ম্যাচে যে গোলটা করেছিলেন তা ছিলো তার এলিগেন্স, লিংক আপ প্লে সর্বোপরি নিজের এটাকিং সামর্থ্যের পুরো দিয়ে সাজানো এক গোল।
ব্রাজিলের হয়ে ৬০ ম্যাচ খেলা এই লিজেন্ড জন্ম নিয়েছিলেন বেলেম দ্যা পারা। আমাজনের কোল ঘেঁষে এই জনপদে বেড়ে উঠেছিল একজন চিকিৎসক, একজন ফুটবল লিজেন্ড। তার আর একটা পরিচয় তিনি একজন রাজনীতিবিদ। করিন্থিয়াসে থাকাকালীন সময়ে করিন্থিয়াস ডেমোক্রেসি নামে একটা সংগঠনের পরিচালক ছিলেন। সেই সময়ে বিরোধী দলের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেন। পরে বেশকিছু রাজনৈতিক কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই ফিডেল কাস্ট্রো, চে গুয়েভারা, জন লেলিন এর মত প্রতিবাদী মানুষকে নিজের হিরো ভেবে এসেছেন। তাই তার থেকে অপশক্তির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ আসবে এটা খুব স্বাভাবিক।
পেলে সক্রেটিসকে ফিফার সেরা ১০০ ফুটবলারের ভেতর জায়গা দিয়েছেন। ওয়ার্ল্ড সকার ইতিহাসের ১০০ ফুটবলারের একজন হিসেবে তাকে ঘোষনা দিয়েছে। ফুটবলীয় এলিগেন্স আর তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর জন্য ব্রাজিলের মানুষ তাকে ভালোবেসে ‘ব্রাসিলিয়া’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর ৪ ডিসেম্বর ২০১১ সালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ব্রাজিলের হয়ে কিছুই না জেতা এই লিজেন্ড শুধুমাত্র তার
এলিগেন্স,তার খেলা দিয়ে,মাঠে নেতৃত্ব গুনাগুণ আর অন্যায়ের প্রতি আপোষহীন থাকার জন্য সারাজীবন ফুটবল প্রেমীর মনে থাকবেন।